সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মাথার চুল মুণ্ডিয়ে যেই পশু জবাই করা হয় তাকে আকিকা বলে। আকিকা দ্বারা সন্তান রোগমুক্ত, বালামুসিবত থেকে মুক্ত থাকে।
হযরত সালমান বিন আমের আদ-দবি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, বাচ্চাদের সাথে আকিকা সম্পৃক্ত। সুতরাং তোমরা শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত করো (অর্থাৎ আকিকার পশু জবাই করো) এবং তার থেকে কষ্ট দূর করে দাও (অর্থাৎ মাথা মুণ্ডর করো)।[1]
সপ্তম দিনে আকিকা করা সুন্নত। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, ফকিহ ইমামগণ প্রায় সবাই একমত। হাসান বসরি ও দাউদ জাহেরি রাহিমাহুমাল্লাহ অবশ্য একে ওয়াজিব বলেছেন। হানাফি মাজহাবে দুইরকম মত আছে—সুন্নত ও মুস্তাহাব।
সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিনে আকিকা করে নাম নির্বাচন করা উত্তম। হযরত বিন সামুরা জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক শিশু সন্তান তার আকিকার পশুর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু জবাই করবে, শিশু সন্তানটির মাথা মুণ্ডন করবে এবং তার নাম রাখবে।[2]
সপ্তম দিনে আকিকা করা সম্ভব না হলে যখন সুযোগ হয় তখন করে নিলেই হবে। তবে সপ্তম হিসাব রাখা ভালো—সাত, চৌদ্দ, একুশ, এরকম করে যা হতে পারে।[3]
যেসব প্রাণী দিয়ে কুরবানি জায়েজ, ওসব প্রাণী দ্বারা আকিকাও জায়েজ।[4]
ছেলের জন্য দুইটি ছাগল বা ভেড়া আকিকা দিতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর আকিকা দুই ছাগল দিয়ে করেন।[5] আর মেয়ের আকিকার জন্য একটি ছাগল বা ভেড়া জবাই করতে হবে। ছেলের ক্ষেত্রেও যদি দুইটি ছাগল আকিকা দেবার সামর্থ না রাখে, তাহলে একটি দিয়ে দিলে কোনো অসুবিধা নেই।[6]
বড় পশু অর্থাৎ গরু বা উটে আকিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ছেলের জন্য দুই ভাগ এবং মেয়ের জন্য এক ভাগ নির্ধারণ করা। অবশ্য সামর্থ্যবান না হলে ছেলের জন্য একভাগে আকিকা দেওয়াও বৈধ।[7] চাই তা কুরবানির পশুর সাথে মিলিয়ে দিক বা পৃথক আকিকার পশু হোক।
বড় পশুর মাঝে একাধিক আকিকা বৈধ। এক্ষেত্রে ভাগ হিসাব হবে।
আকিকার গোশত যেকেউ খেতে পারে। নিজে, দাদা-দাদী, নানা-নানী, আত্মীয়-স্বজন সবাই খেতে পারে, কারো জন্য কোনো বাঁধা নেই। গোশত কাঁচা বা পাক করে বণ্টন করা যায়। অথবা দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
…………………………..
[1] তিরমিজি, হাদিস নং: ১২১৫
[2] ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ৩১৬৫
[3] ফাতওয়ায়ে রহিমিয়া: ৪/২১৩
[4] আকিকা কে আহকাম ওয়া মাসায়েল: ২৬
[5] নাসাঈ, হাদিস নং: ৪২২০
[6] রুদ্দুল মুখতার: ৫/২১৩
[7] আকিকা কে আহকাম ওয়া মাসায়েল: ২৬