১. অমুসলিমদের পূজায় শুভেচ্ছা জানানো জায়েজ নয়। এটি ঈমানবিধ্বংসী আচরণ। কেননা আল্লাহ তাআলা কুফরির প্রতি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন—
اِنۡ تَکۡفُرُوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ غَنِیٌّ عَنۡکُمۡ ۟ وَلَا یَرۡضٰی لِعِبَادِہِ الۡکُفۡرَ ۚ وَاِنۡ تَشۡکُرُوۡا یَرۡضَہُ لَکُمۡ
অর্থ: যদি তোমরা কুফরি কর, তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরি পছন্দ করেন না। আর তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে, তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করবেন। [সূরা যুমার, আয়াত: ৭]
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, কুফরযুক্ত শেআর বা নিদর্শন, যা তাদের জন্য বিশেষায়িত, তা দ্বারা শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। [আহকামু আহলিজ জিম্মাহ: ১/১৪১]
২. অমুসলিমদের পূজায় চাঁদা দেওয়া হারাম। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ
অর্থ: তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন। [সূরা মায়েদা, আয়াত: ২]
সুতরাং পূজার কাজে চাঁদা দেওয়া মানে তাদের শিরকি কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করা। আর শিরক হচ্ছে মহা অন্যায় কাজ। ইসলাম এসেছেই এটা দূরীভূত করার জন্য।
কিন্তু মানবিক প্রয়োজনের মাসআলা ভিন্ন। দুর্যোগ কবলিত হলে তাদেরকে অনুদান দেওয়া জায়েজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন—
لَا یَنۡهٰىكُمُ اللّٰهُ عَنِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یُقَاتِلُوۡكُمۡ فِی الدِّیۡنِ وَ لَمۡ یُخۡرِجُوۡكُمۡ مِّنۡ دِیَارِكُمۡ اَنۡ تَبَرُّوۡهُمۡ وَ تُقۡسِطُوۡۤا اِلَیۡهِمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ
অর্থ: যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ি থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে ও তাদের প্রতি ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালোবাসেন। [সূরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৮]
৩. কোনো মাসলাহাত (প্রজ্ঞাপূর্ণ কারণ) ছাড়া ওদের পূজায় উপস্থিত হওয়া নাজায়েজ। এটি আল্লাহর ক্রোধের কারণ। কেননা হাদিসে এসেছে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন—
وَلَا تَدْخُلُوا عَلَى الْمُشْرِكِينَ فِي كَنَائِسِهِمْ يَوْمَ عِيدِهِمْ، فَإِنَّ السَّخْطَةَ تَنْزِلُ عَلَيْهِمْ
অর্থ: তোমরা মুশরিকদের উৎসবের দিনে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কারণ, তাদের ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হয়। [ আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকি, হাদিস নং: ১৮৮৬১; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস নং: ১৬০৯]
৪. অমুসলিমদের জবাইকৃত হাঁস, মুরগি, খাসি, কবুতর ইত্যাদি খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে বলেন—
اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃَ وَالدَّمَ وَلَحۡمَ الۡخِنۡزِیۡرِ وَمَاۤ اُہِلَّ بِہٖ لِغَیۡرِ اللّٰہِ
অর্থ: আল্লাহ তোমাদের জন্য মৃত জন্তু, রক্ত ও শুকরের গোশত হারাম করেছেন এবং সেই জন্তুও (হারাম করেছেন), যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নাম জবাই জরা হয়েছে। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৭৩]
৫. দেবতার উদ্দেশ্যে দেবির বেদিতে বলিকৃত পশু মারাত্মক হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন—
حُرِّمَتۡ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃُ وَالدَّمُ وَلَحۡمُ الۡخِنۡزِیۡرِ وَمَاۤ اُہِلَّ لِغَیۡرِ اللّٰہِ بِہٖ وَالۡمُنۡخَنِقَۃُ وَالۡمَوۡقُوۡذَۃُ وَالۡمُتَرَدِّیَۃُ وَالنَّطِیۡحَۃُ وَمَاۤ اَکَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَکَّیۡتُمۡ ۟ وَمَا ذُبِحَ عَلَی النُّصُبِ
অর্থ: তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত, সেই পশু যাতে (জবাই করার সময়) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নাম উচ্চারিত হয়েছে, শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু, উপর হতে পতনে মৃত জন্তু, অন্য কোনো পশুর শিংয়ের আঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খেয়েছে এমন জন্তু, তবে (মরার আগে তোমরা) যা জবাই করেছ তা ছাড়া এবং সেই জন্তুও (হারাম), যাকে (প্রতিমার জন্য) নিবেদনস্থলে (বেদীতে) বলি দেওয়া হয়। [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩]
৬. দেবীর বেদিতে পরিবেশিত মিষ্টান্ন, প্রসাদ, নাড়ু, সন্দেশ খাওয়া নাজায়েজ। এমনকি এ উপলক্ষে তৈরিকৃত নাশতা ইত্যাদি খাওয়া উচিত নয়। কেননা, এর মাধ্যমে তাদেরকে সম্মান করা হয়, তাদের শিরকি কাজে সহযোগিতা করা হয় এবং প্রমাণিত হয় তাদের সাথে বন্ধুত্বের বিষয়টি। আল্লাহ তায়ালা বলেন—
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوا الۡکٰفِرِیۡنَ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ؕ اَتُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ تَجۡعَلُوۡا لِلّٰہِ عَلَیۡکُمۡ سُلۡطٰنًا مُّبِیۡنًا
অর্থ: হে মুমিনগণ! মুসলিমদের ছেড়ে কাফিরদেরকে বন্ধু বানিয়ো না। তোমরা কি আল্লাহর কাছে নিজেদের বিরুদ্ধে (অর্থাৎ নিজেদের শাস্তিযোগ্য হওয়া সম্পর্কে) সুস্পষ্ট প্রমাণ দাঁড় করাতে চাও? [সূরা নিসা, আয়াত: ১৪৪]
প্রকাশ থাকে যে, বিধর্মীদের সাথে হৃদ্যতা, অন্তরঙ্গতা ও বন্ধুত্ব হারাম। এটি কুরআন মজীদের সুস্পষ্ট বিধান। তাই কাজের প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে খাওয়ার অবকাশ আছে। কিন্তু বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতাবশত তাদের বাড়িতে খানাপিনা করা ও তাদের দাওয়াত বা অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে না।
৭. ফাসাদ প্রতিরোধের উদ্দেশ্য ব্যতীত এসব মণ্ডপ পাহারা দেওয়া জায়েজ নয়। কেননা, এর দ্বারা শিরকের কাজে সহযোগিতা করা হয়। আর এই জাতীয় সাহায্যের ব্যাপারেই আল্লাহ তায়ালা বলেন—
وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَاب
অর্থ: তোমরা গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন। [সূরা মায়েদা, আয়াত: ২] কুরআনের ভাষায় মূর্তি পূজা গুনাহ এবং জুলুম—দুটোই। বরং এটা জঘন্য থেকে জঘন্যতম অপরাধ।
৮. যেসব জিনিস কেবলমাত্র অমুসলিমদের পূজা ও উৎসবের কাজে ব্যবহার হয়, যেমন: ফটকা, টায়রা, শাঁখা ইত্যাদি, সেগুলোর ব্ বসা করা বা তা সরবরাহ করা মুসলিমদের জন্য জায়েজ নয়। কেননা তা গুনাহের উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে গুনাহের কাজে সহযোগিতা বলেই গণ্য, যা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। বরং ব্যবসা হবে হালালবস্তুর।
৯. অমুসলিমদের দেখাদেখি পটকা ফোঁটানো বা তাদের পোশাক পরিধান করা এবং তাদের মতো আচরণ করা না-জায়েজ। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন—
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
অর্থ: যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং: ৪০৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ৫১১৪]
১০. অমুসলিমদের কাছ থেকে তাদের ধর্মীয় প্রতীক বা চিহ্ন গ্রহণ করা, যেমন কপালে সিঁদুর, চন্দনতিলক, পৈতা, ক্রুশ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম! প্রসন্নচিত্তে গ্রহণ করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পূর্ববর্তী হাদিস ও এই জাতীয় বহু হাদিস এর দলিল। যেমন এক হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন—
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا
অর্থ: বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। [জামে তিরমিজি, হাদিস নং: ২৬৯৫]
১১. মুসলিমদেশে অমুসলিমদের পূজামণ্ডপে আক্রমণ করা বা তাতে বাধা সৃষ্টি করা না-জায়েজ। কেননা, আল্লাহ তায়ালা নবীজি (সা.)-কে কাফেরদের উদ্দেশ্যে বলতে বলেন—
لَكُمۡ دِیۡنُكُمۡ وَلِیَ دِیۡنِ
অর্থ:‘তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আমার দ্বীন আমার।’ [সূরা কাফিরুন, আয়াত : ৬]
এ বাক্যটি তেমনি, যেমন অন্য আয়াতে আছে—
وَاِنۡ کَذَّبُوۡکَ فَقُلۡ لِّیۡ عَمَلِیۡ وَلَکُمۡ عَمَلُکُمۡ
অর্থ: (হে নবী!) তারা যদি তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে (তাদেরকে) বলে দাও আমার কর্ম আমার জন্য এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্য। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৪১]
অন্য আয়াতে এসেছে—
لَنَاۤ اَعۡمَالُنَا وَلَکُمۡ اَعۡمَالُکُمۡ
অর্থ: আমাদের কাজের ফল আমাদের জন্য এবং তোমাদের কাজের ফল তোমাদের জন্য। [সূরা কাসাস, আয়াত: ৫৫; সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১৫]
১২. বিধর্মীদের পূজা অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত করা ও গজল পরিবেশন করা নাজায়েজ। এ ক্ষেত্রে পূর্বে বর্ণিত উমর (রা.) এর বক্তব্যটির প্রতি লক্ষ্য করি।
১৩. দেবদেবীর গুণকীর্তণমূলক কিংবা ধর্মের প্রশস্তিমূলক বিবৃতি দেওয়া হারাম ও কুফর। কারণ, ইসলাম এসেছে এগুলো মূলোৎপাটন করার জন্য। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন—
اِنَّ اللّٰہَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِہٖ وَیَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَمَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰہِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করবেন না। এর চেয়ে নিচের যে-কোন বিষয়ে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে, সে এক গুরুতর পাপে লিপ্ত হল। [সূরা নিসা, আয়াত: ৪৮]
সুতরাং একজন মুসলিম হিসাবে এগুলো থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। ইসলামকে মানতে যথাযথভাবে। কেননা, আল্লাহর দরবারে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণীয় না। কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা—
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
অর্থ: আল্লাহর দরবারে ইসলামই হচ্ছে একমাত্র ধর্ম। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯]