ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসূল (সা.) মানবজীবনের সাথে সম্পৃক্ত সব কিছুর সমাধান দিয়ে গেছেন। সুতরাং এই জীবনব্যবস্থায় কোনো কিছুর অসম্পূর্ণতা নেই।
মদিনায় হিজরতের পর থেকে মৃত্যু অবধি বিশ্বনবী (সা.) ছিলেন আরব ভূখণ্ডের রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর পর পর্যায়ক্রমে হজরত আবু বকর (রা.), উমর (রা.), উসমান (রা.), আলী (রা.), হাসান (রা.), মুয়াবিয়া (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) প্রমুখ বিখ্যাত সাহাবীগণ খলিফাতুল মুসলিমিন তথা মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। এর পর যুগ যুগ ধরে মুসলিম শাসকগণ ইসলামি ভাবধারায় রাষ্ট্রপরিচালনা করেছেন।
ইসলামি অর্থব্যবস্থায় পরিচালিত ওই সময়গুলোতে এমনও কতক যুগ অতিবাহিত হয়েছে, যখন দরিদ্র বলতে কোনো শব্দ ছিল না। জাকাত, ফিতরা গ্রহণের লোকের সংকট দেখা দিয়েছিল। সবাই ছিল সাবলম্বী।
সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা খেলাফতের বিলুপ্তি ঘটে বিগত শতকের ১৯২৪ সালে। এর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩০০ বছরের ইতিহাস মুসলিমদের জন্য গৌরবময় এক অধ্যায়। দীর্ঘ ওই সময়ে রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালিত হতো ইসলামি অর্থনীতি মোতাবেক।
***
“মধ্যযুগীয় বর্বরতা”—শিরোনামে একটি শ্লোগান আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। এই শ্লোগানের মাধ্যমে কথিত প্রগতিশীলরা ইসলামকে আঘাত করতে প্রচণ্ড আনন্দ পায়। কিন্তু স্থূলজ্ঞানের অধিকারী এ সব লোকেরা ভুলে যায়, অথবা জানে না— এই শ্লোগান মুসলিম ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত না। বরং এটি হচ্ছে, আধুনিক ইউরোপের অন্ধকার একটি অধ্যায়। তাদের মধ্যযুগ ছিল জ্ঞানহীনতা, মূর্খতা ও বর্বরতার যুগ।
বিপরীতে মুসলিমদের মধ্যযুগ ছিল সোনালী যুগ। কারণ, এই যুগেই আমাদের ইতিহাসের মহান ব্যক্তিত্বগণ অতীত হয়েছেন। বিশ্বনবী (সা.) থেকে শুরু করে পূর্ববর্তী মহামনীষীগণ ওই যুগেই পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন সাম্য, মানবতা ও ইনসাফের আলো-বাতাস।
পরবর্তীতে নানা কারণে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি ও দুর্বলতা তৈরি হতে থাকে। এই সুযোগ কাজে লাগায় ইউরোপীয় নব্যশক্তি। ফলে ক্ষয় হতে থাকে মুসলিম শক্তির। এর রেশ ধরেই মুসলিমরা হারায় তাদের খেলাফত।
ইউরোপের উত্থান ঘটে মূলত শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে। যারা ইতিহাসের শিক্ষার্থী, তারা বিষয়গুলো জানেন। আর সেই শিল্পবিপ্লবকে কেন্দ্র করেই আধুনিক পুঁজিবাদের জন্ম, যা বর্তমান পৃথিবীতে রাজত্ব করছে। সুতরাং বুঝা গেল, ইসলামি অর্থনীতি কোনো নতুন বিষয় নয়। বরং বর্তমানে প্রচলিত অর্থব্যবস্থাই হলো নব আবিষ্কার।
মজার ব্যাপার হলো, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার থিওরি প্রয়োজনে কয়দিন পর পর বদলাতে হয়। নয়তো এই থিওরি যুগের সাথে খাপ খায় না, অথবা এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয় অনেক অরাজকতা। আবার এই অর্থব্যবস্থায় উপার্জনই হলো মূখ্য। নীতিনৈতিকতার বালাই নেই।
বিপরীতে ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পূর্ণাঙ্গ আল্লাহ প্রদত্ত, যা সর্বযুগে সমানভাবে প্রায়োগিক। এই ব্যবস্থাপনা কোনো যুগেই অকার্যকর নয়। অতীতে লাগাতার ১৩০০ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে এর প্রয়োগ হয়েছে। এখনো চাইলে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োগ সম্ভব; প্রয়োজন শুধু একটু সদিচ্ছার।
***
রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো কিছুকে প্রতিষ্ঠা করতে গেলে হুট করেই করা সম্ভব হয়ে উঠে না অনেক সময়। এর জন্য প্রয়োজন পড়ে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার।
আবার যেখানে পুরো সিস্টেমই চলছে পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী থিওরির উপর, সেখানে পুনরায় ইসলামি ভাবধারায় ফেরার জন্য তো অবশ্যই দরকার দক্ষ জনবলের।
ইসলামি অর্থনীতি পাঠটি মূলত আমাদের সেই দক্ষ জনবল তৈরিরই একটি প্রয়াস মাত্র। আমাদের মিশন শুরু হবে ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে৷ কয়েকজন ব্যক্তি প্রস্তুত হলে এর প্রভাব পড়বে সমাজের উপরে। সমাজ থেকে রাষ্ট্রের উপর।